আমি মাত্রই শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ-এর এপিসোড ৪ দেখা শেষ করলাম। সময় কোনদিকে যে গেলো, টেরই পেলাম না! রিলিজের সাথে সাথে দেখতে না পারায় অস্থির হয়ে ছিলাম, যে আমার আগে সবার দেখা শেষ! শেষমেশ আজ সকালে দেখে মন ঠাণ্ডা করলাম। আচ্ছা একটু খুলেই বলি।
প্রথমেই ট্যাংকে হাজির “রোবোওয়ে,” মানবাকৃতির/হিউম্যানয়েড একটা রোবট নিয়ে। একটা বার ভেবে দেখুন, বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া কয়েকটা ছেলে, যেখানে প্রযুক্তি নিয়ে এতো চ্যালেঞ্জ, এতো বাধাবিপত্তি, সেখানে আস্ত একটা রোবট বানিয়ে ফেলেছে! আর রোবটটা দেখতেও দারুণ! এটাকে ডিজাইন করা হয়েছে একটা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিশেবে। ঠিকমতো কাজ করলে সার্ভিস সেক্টরে একটা ঝড় তুলবে এই রোবট। তার উপর এটার মধ্যে ফেশিয়াল রেকগনিশান সফটওয়্যারও দেয়া আছে! তাদের চাওয়া ছিলো কোম্পানির ৮% শেয়ারের বদলে ২৫ লাখ টাকা। গোলাম মুর্শেদ কাছ থেকে দেখার জন্য রোবটটার সামনে যাওয়ার পর তো আরেক মজার কাহিনী! রোবটটা উলটোপালটা নাম্বার বলতে শুরু করলো! উফ, কাজের সময়েই গ্লিচ? কিন্তু যখন মুর্শেদ বাংলাদেশের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, রোবট ভাই গড়গড় করে সব বলতে শুরু করলো। মুর্শেদের সাথে হ্যান্ডশেইক পর্যন্ত করলো! কিন্তু দিনশেষে, তাদের প্রডাক্টটা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় কোনও শার্কই ইনভেস্ট করেননি, তবে তাদেরকে আগামী সিজনে আরও পরিণত একটা রোবট নিয়ে আসার জন্য উৎসাহ দিলেন। ডিল না হলেও আমরা দারুণ একটা পিচ দেখতে পেলাম, তাদের উদ্ভাবন আর সম্ভাবনার কথা জানতে পারলাম- শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশের মজাই তো এটা, না কি?
এরপর, ট্যাংকে এলো “প্যারেন্টস কেয়ার।” সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপারটা হচ্ছে ফাউন্ডার তার মাকে নিয়ে এসেছেন। নিজের বৃদ্ধা মাকে সেবাযত্ন দেয়ার চিন্তা থেকেই তার এই বয়স্কদের সেবা দেয়ার কোম্পানির শুরু। নার্স আর ন্যানিদের একটা দক্ষ দল নিয়ে তিনি তিন বছর ধরে কোম্পানি চালাচ্ছেন। তাদের চাওয়া ৪% ইক্যুইটির বদলে ৫০ লাখ টাকা। যদিও তারা মাসে ১৭ লাখ টাকা কামাচ্ছেন, সেখান থেকে প্রফিট আসছে মাত্র ৬০ হাজার। ব্যাপারটা নিয়ে সামি বেশ কঠিন প্রশ্ন করলেন। আমাদের উদ্যোক্তা বোঝালেন, কীভাবে সময়ের সাথে সাথে তার ব্যবসার ভ্যাল্যুও বাড়বে। লিওন কিছুটা আগ্রহী হলেও পরে সরে গেলেন। শেষমেশ, সামি একটা অফার করলেন- ২৫ লাখ টাকার বদলে ৪% ইক্যুইটি, সাথে লোন হিশেবে আরও ২৫ লাখ টাকা, যেটার শর্ত ঠিক করে দেবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড। ডিলটা তো ভালোই, না?
তারপর এলো “রিভাইভাল বাংলাদেশ,” তিনজন ফাউন্ডার আর তিনজন কারিগর নিয়ে। তারা দেখালেন ফ্যাশান দিয়েই কীভাবে বাংলাদেশের ঐতিহ্য রক্ষা করে যাচ্ছেন। ১% ইক্যুইটির বদলে তারা চাইছেন ২৫ লাখ টাকা। তাদের বিজনেস এখনও আইডিয়া স্টেইজে, প্রডাকশানের ব্যাপারস্যাপারও এখনও সেভাবে ঠিক হয়নি- অন্যের ফ্যাক্টরিতে প্রডাক্ট তৈরি করছেন। শার্করা এজন্যই সন্দিহান, বিজনেস মডেল বা লাভ করার উপায় নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে গেলেন। ফাউন্ডারদের উদ্দেশ্য ভালোই ছিলো, একটা প্রকৃতিবান্ধব ফ্যাশান ব্র্যান্ড তৈরি করা- কিন্তু শার্কদের মন শুধু এটুকুতেই গলল না। গোলাম মুর্শেদের একটু আগ্রহ থাকলেও পরে আর ইনভেস্ট করলেন না। লিওনের হঠাৎ প্রশ্ন, “আপনারা কাউবয় হ্যাট বানান?”- স্বভাবসুলভ ঠাট্টা করে পরিস্থিতি একটু হালকা করলেন। কিন্তু আফসোস, তাদের খালি হাতেই ফিরে যেতে হলো।
সবশেষে, “পালকি মোটরস” নিয়ে ট্যাংকে এলেন অভিজ্ঞ উদ্যোক্তা মোস্তফা, তার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে সাশ্রয়ী ইলেকট্রিক কার বানানো। এই দুর্দান্ত পিচে তিনি কথা বললেন তার গাড়ির বিল্ড নিয়ে, একটা সাধারণ সিএনজি ট্যাক্সির চেয়ে গাড়িটা কতোটা সাশ্রয়ী সেটাও জানলাম, তার দক্ষ দলের ব্যাপারেও শুনলাম। তার পিচ আর প্রডাক্টের ব্যাপারে শুনে শার্করা তো তখনই স্টুডিওর বাইরে নেমে গেলেন, গাড়িটা কিছুক্ষণ চড়ে দেখলেন। সবাই একদম মুগ্ধ! তারপর ট্যাংকে ফিরে শুরু হলো বিস্তারিত আলাপ- গাড়ির কতোটুকু দেশে বানানো হচ্ছে, কতোগুলো অর্ডার পেয়েছেন, প্রফিট কেমন থাকছে, আরও কতোকিছু। মোস্তফারাই আসলে বাংলাদেশের ইভি (ইলেকট্রিক ভিহিক্যাল) মার্কেটের সত্যিকারের অগ্রদূত। লিওন একটা অফার করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তারা রাজি হলেন না। ঠিক পরপরই সামি বরাবরের মত একটা ডিল নিয়ে এগিয়ে এলেন। তিনি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিশেবে এক কোটি টাকার লোন অফার করলেন, যেটা ভাগ ভাগ করে দেয়া হবে, এবং এই লোনের শর্ত ঠিক করে দেবে সামি’র কোম্পানি স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড। লিওনের ডিলে রাজি না হলেও মোস্তফা এই ডিল নিতে সময় নিলেন না।
শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ-এর এপিসোড ৪ এপর্যন্তই! মজার একটা পর্ব, উদ্ভাবন আছে, উচ্চাশাও আছে, হালকা একটু হাসিঠাট্টাও আছে! আর কতো অপেক্ষা করবো, পরেরটা কখন আসবে!?